কক্সবাজার প্রতিনিধি :: আনন্দ-উচ্ছ্বাসে খোলা মাঠে চলে অতীতের স্মৃতিচারণ
১৯৬০ সালে যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানলগ্ন থেকে সুনামের সাথে এগিয়ে আছে জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে পাঁচ যুগ পার করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আজ দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েট, চ.বি, রা.বিসহ দেশের সনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থান পেয়েছে। এদের অনেকে হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক, সরকারি আমলা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, উদ্যোক্তা। কিন্তু ৬০ বছর পার হয়ে গেলেও এই প্রতিষ্ঠানে কোন সময় এতো বড়সড় মিলনমেলা হয়নি।
গতকাল শুক্রবার সেটাই হয়েছে। সকাল থেকে ব্যাচভিত্তিক নানান রঙ্গের শাড়ি পড়ে স্কুলে মাঠে প্রবেশ করে ছাত্রীরা। বিদ্যালয়ে সমবেত হন সম্প্রীতির মেলবন্ধনে। একে অপরের মধ্যে জড়িয়ে পদমর্যাদা ভুলে অতীত বর্তমানের কথা তুলে ধরেন।
আয়োজকেরা জানান, ১৯৬২-২০২১ ব্যাচের এসএসসি’র প্রাত্তন ছাত্রী ৮৫০ জন রেজিষ্ট্রেশন করেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ছাত্রীরা চলে আসে। তারা বেশিরভাগ অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। গত ৬ মাস আগে থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেরিতে হলেও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সমাপ্ত হয়েছে আয়োজন।
শুক্রবার সকালে স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, ব্যচভীত্তিক ছাত্রীরা একই রঙের শাড়ি পড়ে, মাথায় খোঁপা, চশমা পড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ও খোলা মাঠে বসে চলে অতীতের স্মৃতিচারণা। খোশগল্পে মেতেছে সকলে। কোথায় থাকিস, বাচ্চা কি, স্বামী কি করে, তুই কি করিস ইত্যাদি। চট্টগ্রামের জামাল খান থেকে আয়োজনে অংশ নিয়েছেন, সাবিহা। বাড়ি গোলদিঘির পাড়। তিনি ২০০২ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করেছেন। তিনি তার ব্যাচের কয়েকজনকে নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠেছেন। এভাবে বিভিন্ন সালের ছাত্রীরা তাদের পুরনো বান্ধবীদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।
সকাল সাড়ে নয়টায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে পুনর্মিলনী উৎসবের শুরু। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আকতার। সকাল ১০টায় বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন উপাচার্য শিরীণ আকতার।
বিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণা করে উপাচার্য বলেন, ‘স্বাধীনতার পর আমি চট্টগ্রাম খাস্তগীর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হই। এই স্কুল থেকেই এসএসসি পাস করি। আজ অনেক দিন পর আবার এই প্রতিষ্ঠানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। যেখানে যাই এই স্কুলের স্মৃতি তুলে ধরি। অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। কখনো মনে হয়নি এভাবে সকলের একসাথে দেখা হবে।
পুনর্মিলনী উৎসব আয়োজনের সদস্য আসমা ফেরদৌস বলেন, ‘মোবাইল, ফেইসবুকে দেখা হয়। বাস্তবে হয়না। দীর্ঘ সময় আজ অনেকের সাথে দেখা হলো। অতীত বর্তমান এবং কতো কথা হয়েছে। এ আনন্দ ভাষায় করার মতো নয়। অনেকে দূরে থাকায় অংশ নিতে পারেনি’।
উৎযাপন কমিটির আহ্বায়ক তানিয়া কাশেম বলেন, ‘ অনেকে দূরদূরান্ত থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। পাঁচ যুগ পর আমরা এইরকম অনুষ্ঠান করতে পেরে সত্যি আনন্দিত। আমরা চেষ্টা করবো এই আয়োজন যেন বার-বার করতে পারি। তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ ছাত্রী জেলার বাইরে থাকেন বলেই সম্ভবত এত দিন উৎসব হয়নি। ৬২ বছর পর আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজটি এগিয়ে নিতে পেরেছি। আশা করছি, ভবিষ্যতে এ ধরনের আয়োজন আরও হবে।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদা মোর্শেদা বলেন, এই পুনর্মিলনী উৎসব ঘিরে শুরু থেকে সবার মাঝে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। আমি নিজেও এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তিনি ১৫ বছর ধরে এই বিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছেন। বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এই উৎসব।
পাঠকের মতামত: